এসএম বিশাল: জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ছোট বনগ্রাম সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করেছিল রাজশাহী জেলা প্রশাসন। এতে ওই এলাকার ৯ জন ভূমি বা বাড়ির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হন, ভাঙ্গা পড়ে অনেকের বাড়ি। এসকল ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি ও বাড়ির মালিকদের মাঝে ক্ষতিপূরণের ৩০ কোটি ২৯ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়।
শনিবার (৭ আগস্ট) সকাল ১১টায় নগরীর ছোট বনগ্রাম এলাকায় প্রধান অতিথি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের নিকট চেক বিতরণ করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ড. আব্দুল মান্নান।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নজরুল ইসলাম, পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শিমুল আকতার, জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন ও রাসিক ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তৌহিদুল হক সুমন।
৯ জন ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে- নগরীর ছোট বনগ্রামের মো. কাশেম আলী। তিনি ১.২০৭০ একর জমির জন্য পেয়েছেন ২০ কোটি টাকা। একই এলাকার রাইসুল ইসলাম ও পিয়ারুল ইসলাম ০.১৯৮০ একর জমির বিপরীতে পেয়েছেন ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। একই এলাকার মোসা. হাবিবা ইসলাম ০.০৯৯০ একর জমির জন্য পেয়েছেন ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এছাড়াও অনুষ্টানে অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বাকি অর্থ বন্টন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, পূর্বে অধিগ্রহনকৃত জমির টাকা উত্তোলন করতে স্যান্ডেলের তলা ক্ষয় হয়ে যেতো, তবুও ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকেরা নিজের প্রাপ্য টাকা পেতেন না। আবার পেলেও অনেক কাট-খড় পোড়াতে হতো। কিন্তু বতর্মান সরকার জবাবদিহিতামূলক, স্বচ্ছ ও দূর্নীতিমুক্ত। প্রধানমন্ত্রী তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মূলত: তার শাসনামলেই এমন দূর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক সরকার ব্যবস্থার দেখা মিলেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অধিগ্রহনকৃত স্থানে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যায্যমূল্যে জমির টাকা পরিশোধ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী অতি দ্রুত সময়ে মধ্যে অধিগ্রহনের টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের নিকট হস্তান্তর করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার জমি অধিগ্রহন করলে অত্র এলাকায় প্রকৃত মূল্যের তিনগুন প্রদান করে থাকেন। সে সময়ে দলিলে কম থাকলে কম পাবেন। সেজন্য জমি ক্রয় করে প্রকৃত মূল্য দলিলে উল্লেখ না করা পর্যন্ত জমির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দলিলে স্বাক্ষর না করার জন্য অনুরোধ জানান বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
এসময় তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের তিনগুণ মূল্য ক্ষতিপূরণ প্রদান রাজশাহী জেলা প্রশাসকের প্রতি সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন। এ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য কেউ কোনো প্রকারের টাকা দাবি করে থাকলে তা সরাসরি জেলা প্রশাসককে অবহিত করার জন্যও নির্দেশনা প্রদান করেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ৯ টি সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে রাজশাহী মহানগরীর ছোট বনগ্রাম ও বড় বনগ্রাম এলাকায় দুইটি সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। এই বিদ্যালয় স্থাপনে যাদের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তাদের আজ চেক প্রদান করা হচ্ছে। এই চেক বিতরণে কোনো প্রকারের দূর্নীতি ও হয়রানির স্বীকার কোনো ভূমি মালিককে হতে হয়নি বলে দাবি করেন জেলা প্রশাসক।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে আর কেউ কোন ধরনের হয়রানির শিকার হবেন না। কোনো দালাল বা তৃতীয়পক্ষ না ধরে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখায় যোগাযোগ করলে অতি সহজে স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে জানান তিনি।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.